আমি এক বেওয়ারিশ বলছি
- কামরুজ্জামান সোহেল ১৭-০৫-২০২৪

আমার মৃত্যুতে কারো কোন প্রকার ভ্রূক্ষেপ নেই
একফোঁটা জল নামবে না কারো নয়নজুড়ে
আবেগাপ্লুত হবে না কোন হৃদয়
ছিন্ন হবে না কোন মায়ার বাঁধন।
আমার লাশ পরে থাকবে মর্গের কোন এক কোণে,
হয়তো নির্দিষ্ট সময়ান্তে দাফন হবে কোন এক অচেনা কবরস্থানে
বেওয়ারিশ লাশের সিলমোহর ধারণ করে।

যদি কোনদিন ফেরা না হয় আপনালয়ে
কেউ জানতেও চাইবে না কোথায় নিদ্রাযাপন হচ্ছে আমার,
স্নান পানাহার ভালোমতো হয়েছে কিনা
জানতে চাইবে না কভু।
থুতনিতে হাত রেখে মমতায় পরিপাটি করবে না
মাথার উস্ককুষ্ক চুলগুলো।
জ্বরের ঘোরে কালক্ষেপন করলে
মাথা উচিয়ে কেউ দেখবে না দুচোখে,
একটুখানি মানবতা ঢেলে কেউ
ডাক্তারখানার ঠিকানা দিবে না এসে
কলস হতে জল ঢেলে কেউ পান করাবে না
একবিন্দু জল, সেই সাথে জ্বরের বড়ি।
হাতুড়ির আঘাতে আঙুল ফেটে যখন
ফিনকি দিয়ে বেরুবে শোনিতধারা
দূর হতে দৌড়ে এসে কেউ বেঁধে দিবে না
আঁচলের কাপড় ছিড়ে মমতার চুলচেরা বাঁধন।
ঝালাইয়ের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ যখন ভেদ করবে চোখের পাতা
কোন হৃদয়ে উঠবে না বেদনার ঝড়।
পড়ালেখা শেখার তাগিদ দিবে না কেউ
উৎসাহ তো দূরে থাক
পাঠশালার পথটাও কেউ দেখাবে না আঙুলের নির্দেশে।
ভুল পথে হাঁটলেও কেউ পড়াবে না শাসনের শেকল,
উল্টো হাতে তুলে দেয়া হবে
মানুষ মারার যাতাকল।

আমি নর্দমার কীটবিশেষ,
আস্তাকুঁড়ের পাশে কোন এক নিষিদ্ধ গলিত কক্ষে
কারো মনের ভুলে অনিচ্ছা সত্বেও আমার জন্ম,
এরপর আস্তাকুঁড়ের জমাটবদ্ধ ময়লার ভাগাড়েই বেড়ে উঠা।
মা-বাবা বলতে দুটি সত্ত্বা আছে
সেটা লোকমুখে শোনা
দু'চোখ জুড়ে কখনও তাদের দেখা হয়নি,
স্বপ্নেও যাদের সাথে হয়নি কিঞ্চিত সাক্ষাত।

সমাজের চোখে আমি আগাছা
অযথাই বেড়ে ওঠা পরগাছা।
কারো কারো কাছে টিকে থাকার হাতিয়ারবিশেষ,
প্রতিশোধ নেয়া অস্ত্রের শানিত ধার,
মূল্যের বিনিময়ে হয় বিবেকের বলিদান।
আমি পরিচয়হীন সমাজের এক নিকৃষ্ট চরিত্র
আমার হারানোর কিছু নেই,
নাম যশ খ্যাতি কোনটার পেছনে ছুটে চলা হয়না।
শুদ্ধ সমাজের লোকেরা আমার থেকে
নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলে
পাছে যদি নর্দমার দুর্গন্ধ তাদের আকৃষ্ট করে।

সমাজের লোকেরা আমার একটি নামকরণ করেছে,
"টোকাই"।
কেউ কেউ আবার ভালবেসে ডাকে
"পথশিশু"।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।